পুলিশের অপরাধ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ

১লাখ ৫০ হাজার অভিযোগ: মানুষের কাছে আইনরক্ষাকারীরা এখন আতঙ্ক

পুলিশের অপরাধ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ

ঢাকা প্রতিনিধি: পুলিশকে রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। সমাজের অপরাধ দমনের জন্য। এই অপরাধ দমনের দায়িত্ব যাদের, সেই পুলিশ দিনদিনই অপরাধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। দিনদিনই হয়ে উঠছে বেপরোয়া। ঘুষ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, নির্যাতন, ব্লাকমেইলিংয়ের পাশাপাশি খুনের মতো গুরুতর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতরে এ ধরনের ১ লাখ ৫০ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে আছে।তবে প্রকৃত অপরাধের ঘটনা আরো অনেক বেশী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আদালতেও পুলিশের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলাও ঝুলে আছে। ্তবে পুলিশ সদস্যদের শাস্তি পেতে হয় না। বাদীপক্ষকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় পুলিশ-সদস্যরা ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে। পুলিশ এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।

পুলিশ সদর দফতরে সূত্রে জানা যায় ২০১০ সালে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে প্রায় ১১ হাজার পুলিশের শাস্তি হয়েছে। এসব শাস্তির মধ্যে রয়েছে চাকরিচ্যুতি, বরখাস্ত, পদাবনতি, ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা। মোট অভিযোগের তুলনায় শাস্তির ঘটনা খুবই নগন্য।

ট্রন্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল, বাংলাদেশের জরীপে পরপর দুবার পুলিশকে দেশের সবচেয়ে দূনীতিবাজ বাহিনী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপরেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ যেমন ডাকাতি, ছিনতাই, খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে, তেমনি ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকারও হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় অর্থের লোভে পুলিশ এ অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে বলে বলা হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অপরাধ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তবে এসব অপরাধের জন্য অল্পসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তাকেই শাস্তি পেতে হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, খোদ রাজধানীতেই পুলিশ সদস্যদের নানা অপরাধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। গত মাসে ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড় থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তিন যুবককে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত তিনজনেরই দুই হাত পেছনে ও পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। এ ছাড়া দুজনের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। রাজধানীর উপকণ্ঠ আমিনবাজারে ছয় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করর ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে মাদক ব্যাবসায়ী ও পুলিশের যোগসাজসে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। পরে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নিহত ছয় ছাত্রকে ডাকাত প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠে। পুলিশের সহায়তায় পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতারের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়। পরে ওই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ওসিসহ তিন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মিরপুর থানার ওসিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা হয়েছ। আবদুল কাদের মিয়া নামে একজন বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন। মিরপুর থানার সাবেক ওসি জাকির হোসেন মোল্লা, উপ-পরিদর্শক আবদুল আজিজ ও আবু বকরের বিরুদ্ধেও ঢাকার সিএমএম আদালতে ঘুষ গ্রহণ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগে মামলা হয়।। মতিঝিল থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা হয়। থানায় অপহরণের মামলা করতে গেলে মতিঝিল থানার পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা নিলেও আসামি গ্রেফতার না করে উল্টো বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় পুলিশ। এদিকে আরেক ঘটনায় রামপুরা থানার ওসির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশের বিরুদ্ধেও। পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য রাখার অভিযোগও রয়েছে একই থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। পল্টন থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। মগবাজারের সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী বাবুল গাজীকে হত্যার অভিযোগে রমনা থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ, দুই সোর্সসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা হয়েছে। পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক ইয়াকুব ও সহকারী উপ-পরিদর্শক আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন পল্লবীর ফুটপাতের এক কাপড়-বিক্রেতা। কদমতলী থানাধীন দনিয়া বাজারে চাঁদার টাকা আনতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হন তিন পুলিশ কনস্টেবল। কেরানীগঞ্জ থানায় আটক হাজতিকে মারধর করে হত্যার অভিযোগে ওসি ও দুই উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা হয় ঢাকার সিএমএম আদালতে। ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কমার্স কলেজের ছাত্র মোমিনকে তাদের উত্তর ইব্রাহীমপুরের বাসার সামনে খুনের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ তিনজনকে মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত।

নিরীহ তরুণকে ডাকাত বানিয়ে গণধোলাইয়ের মাধ্যমে হত্যা করে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। হত্যা ও হত্যাকান্ডে সহযোগিতার অপরাধে পুলিশসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নোয়াখালীর ২ নম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক উল্লাহকে ক্লোজড, এসআই আকরাম শেখ এবং দুই কনস্টেবল আবদুর রহিম ও হেমারঞ্জন চাকমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত মাসে ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড় থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তিন যুবককে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত তিনজনেরই দুই হাত পেছনে ও পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। এ ছাড়া দুজনের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। রাজধানীর উপকণ্ঠ আমিনবাজারে ছয় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে মাদক ব্যাবসায়ী ও পুলিশের যোগসাজসে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। পরে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নিহত ছয় ছাত্রকে ডাকাত প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠে। পুলিশের সহায়তায় পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতারের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে আঘাত করেন খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল উদ্দিন। পরে ওই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ওসিসহ তিন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ডাকাতি করতে যেয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাদের ঘেরাও করে গণধোলাই দিয়ে আটক করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। আহত পুলিশ সদস্যদের ছাড়িয়ে আনাকে কেন্দ্র করে থানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের এসপি ও জেলার ডিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক আইজি এস এম শাহজাহান বলেন, অপরাধের দায়ে সাধারণ মানুষের চেয়ে পুলিশের শাস্তি বেশি হওয়া উচিত। কারণ পুলিশকে রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন তাদের শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা মনে করেন, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ না হলে তাদের অপরাধও বন্ধ হবে না।

পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি অবশ্য বলেন দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে আমি ভাবে মনে করি না।

পুলিশ সদর দফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ জমা পড়ে, সেগুলোর তদন্ত পুলিশই করে থাকে। যে কারণে অভিযোগের তদন্ত সঠিকভাবে হয় না। পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর শাস্তি হয়েছে, এমন নজির কম। এসব ক্ষেত্রে কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের শাস্তি পেতে হয় বেশি।

এ কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীরা পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে না পেরে আদালতের আশ্রয় নেয় মানুষ। আদালতে মামলা হলেও পরে তা আর বেশি দূর এগোয় না। পুলিশের চাপে ভুক্তভোগীরা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা শাস্তি না পাওয়ায় পুলিশ বেপরোয়া হতে থাকে।

একুশ নিউজ মিডিয়া এখন ফেস বুক এ

Visit us on FaceBook

একুশ নিউজ মিডিয়া এখন ফেস বুক এ Video News: www.EkushTube.com

তথ্য কণিকা Jahan Hassan জাহান হাসান
Ekush, Publisher/Editor/ Hollywood media hyphenate/ একুশ নিউজ মিডিয়া, লিটল বাংলাদেশ, লস এঞ্জেলেস / 1 818 266 7539 / FB: JahanHassan

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান