লস এঞ্জেলেসে বাদাম-এর গুনীজন সম্মাননাঃ


লস এঞ্জেলেসে বাদাম-এর গুনীজন সম্মাননাঃ
আটজন ব্যক্তিত্বকে বাদাম-হলিউড পদক প্রদান
লস এঞ্জেলেস, ৩০ সেপ্টেম্বর (একুশ নিউজ মিডিয়া)ঃ লস এঞ্জেলেসের অভিজাত এক রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ডাইভার্সিটি, আর্টস এন্ড মিডিয়া (বাদাম) এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেলেব্রেটি এওয়ার্ড প্রদান করে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর। অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে আটজন ব্যাক্তিত্বকে বাদাম-হলিউড পদক প্রদান করা হয়।
BADAM Ibne Mizan Ekush Jahan Hassan
দেশ ও প্রবাসে শিল্প-সাহিত্য-সংষ্কৃতি-ক্রীড়া ও সমাজ উন্নয়নের আইকনদের কর্মের মূল্যায়ন, উৎসাহ, অবদানের স্বীকৃতি এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রেরনা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি ও স্বদেশী স্বকীয়তাকে সমুজ্জ্বল রাখার নিমিত্তেই বাদাম-হলিউড পদক-এর সৃষ্টি।

বাংলাদেশের যে আটজনকে নিয়ে বাদামের আজকের আয়োজন -তারা প্রতেকেই দেশের গুনী ব্যক্তিত্ব। এবারে যারা আজীবন সম্মাননা পদক পেলেন তারা হলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের লিজেন্ড পরিচালক, প্রযোজক ইবনে মিজান, স্বাধীনতাউত্তর বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের পুরোধা সৈনিক, “স্পন্দন” ব্যান্ডের নাসির আহমেদ অপু। আরো সম্মাননা পেলেন, কাজী নজরুল ইসলামের কর্মের উপর অবদানমূলক কাজের জন্য খিলখিল কাজী, ডঃ গুলশান আরা কাজী, কবি রেজাউদ্দীন ষ্টালিন ও প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক ফেরদৌস আরা। অভিনেত্রী তারিন জাহান, বিউটিশিয়ান – মেকআপ আর্টিষ্ট নাহিন কাজীকে ও সম্মাননায় ভূষিত করল বাদাম।
BADAM Tarin Nahin Zabin Hilton Jahan Hassan Ekush News Media
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কাজী মশহুরুল হুদা। সহযোগীতায় ছিলেন শাহানা পারভীন, এম কে জামান ও জাহান হাসান। সংগঠনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন বাদামের উপদেষ্টা মোবারক হোসেন। সম্মানিত বরেন্য ব্যক্তিত্বদের উপর নির্মিত অডিও-ভিস্যুয়াল প্রর্দশনীর মাধ্যমে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইবনে মিজানকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাদামের প্রধান উপদেষ্টা এম কে জামান। নাহিন কাজীকে ব্যবসায়ী ও সংগঠক ফরিদ আহমেদ নুরু ও তারিন জাহানকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন চিকিৎসক ও সমাজসেবক ডাঃ রবি আলম।
BADAM Ekush News Media Jahan Hassan
তিন পর্বের এই অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু। বাদামের পক্ষ থেকে ক্যালিফোর্ণিয়ায় ৬ষ্ঠ কাজী নজরুল ইসলাম এনডাউমেন্ট লেকচারশীপ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন তরঙ্গ অব ক্যালিফোর্নিয়ার আগত কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এই পর্বে ফেরদৌস আরাকে স্মারক সম্মাননা প্রদান করেন বাদামের আহবায়ক জাহান হাসান। খিলখিল কাজীকে জাতীয় বক্সার আক্তার ভূইয়া, ডঃ গুলশান আরা কাজীকে মোবারক হোসেন ও রেজাউদ্দীন ষ্টালিনকে শফিঊল আলম (ফ্রেন্ড বাবু) স্মারক সম্মাননা প্রদান করেন।
BADAM Jahan Hassan ekush news media
সম্মানিতরা তাদের বক্তব্যে প্রবাসে তাদেরকে এই ধরনের তথ্যপূর্ণ ও ব্যক্তিগতভাবে যত্নশীল উপস্থাপনের জন্য বাদামকে ধন্যবাদ জানান এবং দেশ-প্রবাসের মাঝে সেতুবন্ধনের এই মহতী প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান।

BADAM Jahan Hassan ekush news media

শেষ পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন ইবনে মিজানের বড় ছেলে ব্যবসায়ী, চিত্রনায়ক টিটো মিজান।
বরেন্য ব্যক্তিত্বদের উপর ভিডিও নির্মান ও গবেষনায় ছিলেন জাহান হাসান। দর্শক-শ্রোতায় পরিপূর্ণ এই ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানে লস এঞ্জেলেস সহ পার্শ্ববর্তী শহরের বিদগ্ধজনেরা যোগ দেন।

ছবি লিঙ্কঃ http://www.facebook.com/media/set/?set=a.10151174942411897.477044.826936896&type=1&l=8db18e46cb





ওরা আটজনঃ বাদামের পথচলা ও আজকের উদিতারা


লস এঞ্জেলেস থেকে জেসমিন খানের কলাম
হলিউডে ওরা আটজনঃ বাদামের পথচলা ও আজকের উদিতারা
-জেসমিন খান
হলিউডের দেশে অর্থাৎ লস এঞ্জেলেসের “রয়াল দিল্লি প্যালেস” এর হলরুমে তখন আলো আধারির নরম আলোর তৈরী মোহনীয় আলোকসজ্জার মাঝে মঞ্চের বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শিত হচ্ছে একটা গানের দৃশ্য। গানের সুর টা খুব আবেগময়। কন্ঠটাও খুব মিষ্টি। গায়িকা নিজেই অংশ নিয়েছেন কোরীয়গ্রাফিতে। আকাশ দেব কাকে? গানের কথায় আকাশ ছুয়ে যাওয়ার বাসনা, বৃষ্টির রিমঝিম ধারা ও শব্দের সাথে সুললিত কন্ঠ মাধুর্য ছুয়ে যাচ্ছে দর্শক-শ্রোতার হৃদয়। বৃষ্টি দেখতে দেখতে দর্শক শ্রোতাও পৌছে গেছেন বাংলাদেশের বর্ষার মাঝে। বাংলাদেশে এখন শরত এসেছে। হয়ত সেখানে এখন সুনীল আকাশে কৃষ্ণবর্ণ মেঘের আনাগোনা। বর্ষা বিদায় নিলেও যাই যাই করেও এখনো দাড়িয়ে আছে দুরে কোথাও। তবুও শরত এসেছে। এসেছে তার শিশির ভেজা সবুজ মাঠ,খালে বিলে পদ্ম ও শিউলির লাবন্য নিয়ে। এখন ভোর ভোর সকাল নেমেছে বাংলাদেশে। কুয়াশার চাদর সরিয়ে সকালের স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পরছে আমার দেশের পথে প্রান্তরে…|

চমক ভাঙ্গলো প্রচন্ড হাততালির শব্দে। গায়িকা অভিনেত্রী তারিনের গাওয়া গানের অংশ শেষ হয়েছে ,এখন অভিনয়ের অংশ বিশেষ দেখানো হচ্ছে। আয়োজনটি বাদামের পক্ষ থেকে। BADAM বাদাম -মানে, বাংলাদেশ এসোসিয়েসন অব ডাইভারসিটি আর্টস আন্ড মিডিয়া। আজ এখানে বাদাম আয়োজিত এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন দেশের আট জন গুনী ব্যক্তিত্ব। তার মধ্যে পাঁচ জনই নারী। নারীদের এই সাফল্য যে কতটা আনন্দের তা নতুন করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। আমি পর্দায় জাহান হাসানের ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখতে দেখতে ভাবছিলাম – সাকসেস মাপার মাপকাঠিটি কেমন? কোন বিশেষ সংগায় বাধা যায় সাফল্যের রসাযন। যে মেয়েটা মিস ইউনিভার্স অথবা সেরা সুন্দরীর মুকুট পরে সারা দুনিয়ার মানুষকে তাক লাগিয়ে ফ্লাইং হাসি ছুড়ে দেয়, আর যে মেয়েটা লন্ঠনের আলোয় অঙ্ক কসে কসে ইউনিভার্সিটি বা অন্য কোনো ডিগ্রির পরীক্ষায় ভালো ভাবে উতরে যায়,-তাদের মধ্যে কে বেশী সফল? প্রশ্নটা প্রায়ই আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। নারী মুক্তির ইতিহাস নিয়ে কত কথা শুনি।

নারীবাদের আইনেস্টায়েন সিমন দা বুভেয়র এর “দা লাজিয়েম অফ সেক্স ” বা দা সেকেন্ড সেক্স” আদ্যপ্রান্ত পড়েও বুঝে উঠতে পারিনি এই সব গোলমেলে প্রশ্নের উত্তর। বুঝতে পারিনা তার আসল সংগা।একসময় পুতুল খেলার বয়সের বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো ধর্ম রক্ষার নামে। তাদের স্বামী নির্বাচনের ব্যাপারে বয়সের কোনো মাপকাঠি ছিল না। একজন পুরুষ হলেই হলো। বৃদ্ধ,এমন কি মৃত্যু পথযাত্রী হলেও ক্ষতি নেই। সমাজ পতিদের মন রক্ষা হলেই বাধা নেই। তার পর বিধবা অথবা সহমরণ এই ছিল তাদের ভবিতব্য। সহমরণের ভয়ংকর প্রথা, বিধবাদের প্রতি সমাজের অকথ্য অত্যাচার, এসব থেকে তাদের বাচাতে এগিয়ে এসেছিলেন রামমোহন রায়,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর মতো মানুষ। বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন মেয়েমানুষ নামের এই সব অবলা বাকরুদ্ধ প্রাণীগুলো বাঁচতে শিখুক। ভালোমন্দ বুঝতে শিখুক। স্বপ্নটাকে আরো একটু বাড়িয়ে বিধবা-বিবাহ পর্যন্ত যেতে তাকে কম হেনস্থা সইতে হয় নি !

বিদ্যাসাগরের সময় থেকে বেগম রোকেয়ার সময় পর্যন্ত যে সব মেয়েরা বিদ্যাসাগর অথবা বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন সার্থক করতে তুচ্ছ করেছিলেন সমাজের চোখ রাঙ্গানি ও ভ্রুকুটি -তারা কি বেশী সাফল্যময়ী নাকি সে সময়ের অভিজাত পরিবারের লোরেটো বা বেথুন থেকে পাশ করা সর্ব বিদ্যায় পারদর্শী মেয়েটি বেশি সাকসেসফুল তা ভাবনায় আসে অনেকটাই|

সাফল্যকে মাপা খুব জটিল একটা কাজ। তার নিজেরই একটা জ্যো-তি আছে। সে আলোতেই সে উদ্ভাসিত হয় সকলের চোখে। তেমনি আলোতেই গুণীজনদের আরো আলোকিত করবার প্রত্যয় ও প্রচেষ্টা নিয়েই বাদামের জন্ম। লস এঞ্জেলসে বেশ কিছু সংগঠন থাকা সত্বেও নতুন আরো একটি সংগঠন কেনো –এ প্রশ্নের উত্তরে বাদামের আহবায়ক জাহান হাসান জানালেন –বাংলা সংস্কৃতির মূল ধারার বিকাশ ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখবার একান্ত প্রচেষ্টাই বাদামের মূল লক্ষ্য। আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী অধ্যুষিত এই এলাকার একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে দেশের ও প্রবাসের কবি সাহিত্যিক ,দার্শনিক,সাংবাদিক ,অভিনেতা ,অভিনেত্রী ,ক্রীড়াবিদ ও সমাজের অন্যান্য শাখার প্রথিতযশা মানুষদের মূল্যায়নের জন্যই বাদাম কাজ করে যাবে।

এ লক্ষ্যেই বাদাম তার প্রথম আয়োজন করে -“সাম্প্রতিক বাংলাদেশ “। এই উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রবাসী হৃদয়ের অনেক চিন্তা-ভাবনার কথা উঠে আসে। কারণ প্রবাসের নিশ্চিত ও নিরাপদ জীবনে বাস করলেও দেশের সুখ দুঃখ ,আনন্দ বেদনা ঘিরে রাখে প্রতিনিয়ত প্রায় সকল প্রবাসীকেই। হৃদয়ের চোরা কুঠুরিতে আলোড়ন তোলে দেশের ভাবনা। এই আবেগ থেকেই আলোচনা হয়ে ওঠে আরো প্রানবন্ত। স্থানীয় প্রবাসী ও পুরোনো সতীর্থদের সাথে যোগ দেন দেশের এর আর এক জন সফল মানুষ -ফিডব্যাক এর প্রথম ভোকালিস্ট, স্কয়ার ফার্টিলিটি সেন্টারের প্রধান স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: জাকিউর রহমান। সম্বর্ধনা জানানো হয় বাংলাদেশে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মানের অগ্রদূত চলচ্চিত্রকার মোহাম্মদ হোসেন জেমিকে। যিনি এই হলিউড থেকেই উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মানের ওপর।

এর মাঝেই বিষাদের ছায়া নেমে এলো বাঙালি সমাজে। শুধু বিষাদ নয় -এ যেনো এক কাল বৈশাখী ঝড়। কিংবদন্তির রূপকথার নায়ক হিসেবে যে মানুষটি অতি অনায়াসে স্থান করে নিয়েছিলেন দেশের কোটি মানুষের ভালবাসায়। সেই মহানায়ক লেখক হুমায়ুন আহমেদের চির প্রস্থানের পর বেদনাহত বাদাম পরিবার। সেই বেদনাকে সঙ্গী করে আয়োজন হলো -“-হুমায়ুন আহমেদ স্মরনে–শ্রদ্ধাঞ্জলি “। তবু যেনো পাওয়া হলো না পরিপূর্ণ পাওয়ার দুর্লভ আনন্দ, যা অবিস্মরণীয় হতে পারতো! কারণ সদ্য প্রয়াত সেই মানুষটি অনন্তলোকের ওপার থেকেও আচ্ছন্ন করে রেখেছেন তার পাঠকের চিন্তা চেতনা ,মনন শীলতা। বাদামকে কেন্দ্র করে হুমায়ুন ভক্তরা -জানালেন তাদের সেই অতৃপ্ততার কথা -বেদনার কথা ,শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কথা।

এর পর বাদাম আয়োজন করে ওপার বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দোপধ্যায় এর সাম্প্রতিক বই বেস্টসেলার ” কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট” এর হলিউডে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। আনন্দবাজার পত্রিকার সাবেক সহ সম্পাদক ও সংবাদ প্রতিদিনের সহ সম্পাদক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত লেখালিখি করেছেন -রবীন্দ্র জীবনের গোপনচারীনিদের নিয়ে। তার “আদরের উপবাস “বইটিতেও তিনি রবীন্দ্রনাথের জীবনের তিন নারীর ভূমিকার অজানা প্রেমময় দিকগুলোর কথা তুলে ধরেছেন। তারা হলেন কাদম্বরী দেবী ,লেডি রানু মুখার্জি এবং ভাইঝি ইন্দিরা দেবী |স্কটিশ চার্জ কলেজের একদা ইংরেজির অধ্যাপক রঞ্জন বন্দোপধ্যায় তার” আদরের উপবাসে ” জানিয়েছেন যে রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ মুসলমান ছিলেন | তাদের পূর্বপুরুষের একজনের নাম ছিল -পীর আলী। যে কারণে তাদের পিরালী ব্রাহ্মন হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং নির্ভেজাল ব্রাহ্মন্ না থাকার কারণে ঠাকুর পরিবাররের ছেলেমেয়েদের বিবাহে -এমন কি রবীন্দ্রনাথেরও বধু সংগ্রহে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় |

সাহিত্যের কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই, গোত্র নেই, নেই দেশ কাল সীমানা। সাহিত্য সকলের। তাই বাদাম তার সীমানা করেছে উন্মুক্ত। দেশ কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাদাম সকলের। বিশেষ করে বাংলা ভাষা ভাষীদের প্রতিটি মানুষের। বাংলাদেশের যে আটজনকে নিয়ে বাদামের আজকের আয়োজন -তারা প্রতেকেই দেশের গুনী ব্যক্তিত্। দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনে তাদের অবদান অনষিকার্য। চলচিত্র বা সিনেমার পরিচালক হিসেবে ইবনে মিজান সুপরিচিত একটা নাম। বহু সফল বানিজ্যিক ছবির নির্মাতা তিনি। বর্তমানে তিনি লস এন্জেলেসে বসবাস করছেন। ইবনে মিজান ছাড়াও আজীবন সম্মাননা সনদ পেলেন নাসির আহমেদ অপু। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিকের, সম্ভবত ৭২ এর দিকে ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে জনপ্রিয় দল ” স্পন্দন ” এর সংগঠক ও প্রধান ভোকালিস্ট। বহু জনপ্রিয় গানের নির্মাতা তিনি। তার লেখা ও সুর করা গান -এমন একটা মা দেনা ,যে মায়ের সন্তানেরা -কান্দে আবার হাসতে জানে,-প্রচন্ড ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তিনিও বর্তমানে এখানেই বাস করছেন।
BADAM
নাহীন কাজী সম্মাননা পেলেন একটু ভিন্ন খাতে। তিনি একজন সফল বিউটিসিয়ান। তার কাজ অনেকটা অন্তরালে। টেলিভিশন বা মঞ্চের অভিনেত্রী বা গায়িকাদের সাজসজ্জায় আমরা মুগ্ধ হই, অনেক সময় অনুকরণ ও করতে চাই, সেই সব মনোমুগ্ধকর সাজ সজ্জা একজন বিউটিশিয়ানের সৃষ্টি। আধুনিক বিশ্বে সব কিছুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলতি ফ্যাশন, ফিউসন, লাইফ স্টাইল ট্রেন্ডস, হেলথ কেয়ার, তথা পারসনাল গ্রুমিং সব কিছুই জীবনে অপরিহার্য। বিশেষ করে যারা সেলিব্রিটি বা মিডিয়ার সাথে যুক্ত। সৌন্দর্য চর্চা এবং সুন্দর থাকা তাদের প্রথম ও প্রধান শর্ত। নাহীন কাজী তার কাজের মাধ্যমে দেশের মিডিয়া জগতে এক নন্দিত শিল্পীর পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন ইতিমধ্যে।

প্রখ্যাত গায়িকা ফেরদৌস আরার কথা নতুন করে বলবার কিছু নেই। তিনি জাত শিল্পী। অত্যন্ত খ্যাতিমান এই গায়িকা সঙ্গীতের সব শাখায় অবাধ বিচরণ করলেও নজরুল সঙ্গীতে তিনি ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তার জনপ্রিয়তা আজ আর দেশে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পরেছে সমস্ত পৃথিবীর প্রবাসী বাঙালির মাঝে। খিলখিল কাজিও এমনি একজন মানুষ। তিনি শুধু কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি নন ,প্রখ্যাত আবৃত্তিকার কাজী সব্যসাচীর কন্যা খিলখিল কাজী নিজে ও একজন শিল্পী। বহুবিধ প্রতিভার অধিকারিনী তিনি। অথচ তার কোনো প্রকাশ তার মধ্যে নেই। তিনি তার অসাধারণ বলবার ক্ষমতায় বর্ণনা করলেন কবি নজরুলের জীবনের অজানা আটপৌরে দিকগুলো।মুহুর্তেই বিদ্রোহী কবি তার যোজনার দুরত্ব ঘুচিয়ে হয়ে উঠলেন আমাদের সকলের আপনার। আমরা শ্রোতার দল খুঁজে পেলাম সেই নজরুল -যিনি রাগ করছেন,ফুটবল খেলে প্রিয় দল হেরেছে বলে অভিমানে কাঁদছেন,আবার সন্তানদের নিয়ে আনন্দ করে ঘুরছেন সাধারণ গৃহস্থ হয়ে, এই পাওয়াও বড় কম নয়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি তথা বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিশ্ব সমাজে পরিচিত করার লক্ষ্যে নর্থ আমেরিকাতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন নজরুল গবেষক ডঃ গুলশান আরা কাজী। তাকেও সম্মাননার অন্তর্জালেও আবদ্ধ করল বাদাম।

বেশ অনেকক্ষণ ধরে স্ক্রিনে দেখছি মিডিয়া কাপানো সেলিব্রিটিদের আনাগোনা। সাংবাদিক ও বাদামের আহবায়ক জাহান হাসানের অসাধারণ ভিডিও প্রেজেন্টশনএ প্রতিটি গুনিজনের জীবন বৃত্তান্ত ফুটে উঠেছে জীবন্ত হয়ে উঠছে রওনাক সালাম, শাহানা পারভীন ও এম কে জামানের সাবলীল ধারা বর্ণনায়। সঞ্চালক মশহুরুল হুদা তার সহযোগী শাহানা পারভীন ও এম কে জামানের প্রানবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটিকে করে তুলছে অত্যন্ত মনোগ্রাহী। কিন্তু কি যেনো একটা নেই। কি যেনো একটা অতৃপ্তি ! সাহিত্য বা কবিতার অনুপস্থিতি চোখে লাগে বৈকি ! উদ্যোক্তারা কি টেলিপ্যাথী জানেন?

এবার মঞ্চে যিনি এলেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন কবি। নজরুল একাডেমির ডেপুটি ডিরেক্টর রেজাউদ্দিন স্টালিন তার সব পরিচয় ছাড়িয়ে কবি পরিচয়েই যেনো বড় বেশী কাছের হয়েছেন সকলের। কারণ অনেকেই তার কবিতা শুনতে চান। অত্যন্ত শক্তিমান এই কবি, কবিতার রাজ্যে বাস করেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন কাজী নজরুলের সব সৃষ্টিকে যথাযত ভাবে বাঁচিয়ে রাখবার প্রয়াসে। সকলের অনুরোধে তিনি পাঠ করলেন নিজের লেখা কিছু কবিতা। তার প্রায় কবিতায় তিনি প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষার কথা বলেছেন। পৃথিবীকে বাঁচাবার কথা বলেছেন। স্টালিন বললেন কবিরা শুধু দিতে চায়, দিতে চায় হৃদয় ভরে। পৃথিবীকে সজীব ও সুন্দর রাখতে চায়। বিনিময়ে চায়না কিছুই। কোনো ঐশ্বর্যতেই কবিদের রুচি নেই। কবিরা প্রকৃতি ভালোবাসে তা আমরা জানি। তারা যে ঐশ্বর্য চায় না তাও আমরা জানি। অনেক বছর আগে শার্ল-বদলিয়ার বলেছিলেন –
কি তুমি চাও -অজানা আগন্তুক? মনি কাঞ্চন ,নাকি সোনা রুপা ?
কোথায় তোমার দেশ ?কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান ?
অনেক প্রশ্নের উত্তরে সে বলছে —
আমি ভালো বাসি মেঘ ,চলিষ্ণু মেঘ ,যারা উড়ে যায় ওই উচু থেকে উচুতে …..||
আকাশ আর মেঘ থেকে আবার ফিরে এলাম মাটিতে। এই হলরুমে সুবেশী অসংখ্য নারী পুরুষের ভি। পরিমিত আলোক সজ্জা, চা কফি ছাড়াও সুখাদ্যের কমতি নেই। হৃদয় ও উদরের পরিপূর্ণ উপাদান।

বাদাম বয়সে নবীন হলেও কাজে প্রমান করেছে দায়িত্বশীলতার। ভাবছি –বাদাম যে প্রত্যয় দিয়ে শুরু করেছে তা ছিল অনেকটাই প্রতিশ্রুতিশীল। ছিল অনেক অঙ্গীকার। বাদাম কি তার প্রথম অঙ্গীকার থেকে কিছুটা সরে এসেছে? কিছুটা কি বদলে গেছে তার ভাবনার গতি? এই লস এন্জেলেসেই এমন বেশ কিছু মানুষ আছেন যারা সম্মাননা পাওয়ার তালিকার প্রথম সারিতে আছেন। আমার হয়ত অনেকের সাথে তেমন পরিচয় নেই, কিন্তু কিছু মানুষের কথা না বললেই নয়। তাদের মধ্যে আছেন –ড: মাহবুব হাসান, লেখক তপন দেবনাথ, কাজী মশহুরুল হুদা, মুক্তাদির চৌধুরী তরুণ ও আরো অনেকেই। বাদাম কি ভাবছে তাদের নিয়ে? বাদাম কি তার পরবর্তী কাজের কথা ঘোষনা করেছে ইতিমধ্যে? জানবার বাসনা রইল অনেকটাই।

কবিতার রাজ্য থেকে আবার ফিরে এলাম গানের জগতে। তারিনের গানের মধ্য দিয়ে। তারিন জাহান বা তারিন এতটাই পরিচিত একটা নাম দেশের মিডিয়া জগতে যে ,তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলবার আর নেই। মিডিয়ার কল্যাণে তার সবকিছুই সবার মোটামুটি ভাবে জানাই আছে। নতুন কুড়ির শিশু শিল্পী হিসেবে তারিনের পথ চলা শুরু। তার পর থেকে পথটা শুধুই সাফল্যের। নাচ, গান, অভিনয় সবকিছুতেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা পাওয়া নামটি তারিন। আজকের দিন শুধু নয়। তারিন এগিয়ে যাবে আরো আরো অনেক দূর। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম –সাফল্যের বেরমিটারের পারদ কি দিয়ে মাপা যায় ,যদি সে হয় নারী? আমেরিকার এই সব দেশে নারী পুরুষের তেমন তফাত মাপা হয় না। নারীদের কোনো জবাবদিহিতার দায় ও তেমন নেই। তবু ভাবি আরো কতদূর যাবে বাংলাদেশের মেয়েরা? পলে পলে প্রতিবন্ধকতার বেড়ী এড়িয়ে? আমি জানি আজকের উদিতারা ,আজকের নারীরা অনেক চেতনা সম্মৃদ্ধ। তারা নিজ যোগ্যতাতেই খুঁজে নেবে পথের দিশা। আলোকের ঝরনাধারায় ধুয়ে দেবে সব অন্ধকার।

বাদাম সাথে থাক আমাদের। আজকের পৃথিবীর হিংসা বিদ্দেষ,অশান্তির কালো মেঘের মধ্যে দেখা দিক ভালবাসার আলোর উৎস। অন্ধকার গভীর হয় সূর্যের দুর্বল অবস্থানের জন্য। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রার্থনায় সূর্য আরো প্রখর হোক পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য। বেঁচে থাক প্রেম তার জাদুকরী উজ্জলতায়। বেচে থাক ফুল, নদী, পাখি, গান, কবিতা, সাহিত্য ও সুন্দর। এই সুন্দরের আগমনী সুরে –বাদাম এর স্বপ্ন দেখা –জাহান হাসান, কাজী মশহুরুল হুদা, এম কে জামান, পঙ্কজ দাস, ফারাহ সাঈদ, সৈয়দ এম হোসেন বাবু, শাহানা পারভীন, শফিউর রহমান বাবু ,খাজা এরশাদ মইনুদ্দিন পপসি, আকতার ভুইয়া, মোবারক হোসেন ও কবি রওনক সালাম সহ বাদামের সকল সদস্য ও গুনগ্রাহীদের জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। এ পথ চলা সার্থক হোক।।
ছবি লিঙ্কঃ http://www.facebook.com/media/set/?set=a.10151174942411897.477044.826936896&type=1&l=8db18e46cb