অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি: জলদস্যুকবলিত বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’


অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

Fri, Dec 17th, 2010 1:46 pm BdST

চট্টগ্রাম, ডিসেম্বর ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করে চট্টগ্রামে মানববন্ধন হয়েছে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির সাবেক ক্যাডেটরা এ মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে সোমালিয়ায় জিম্মি এমভি জাহান মনির ১২ ক্যাডেটের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মোরশেদ শুভ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমভি জাহান মনিতে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির সাবেক পাঁচ ক্যাডেট জিম্মি রয়েছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বুকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারে জাহাজ মালিকের পাশাপাশি সরকারের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
জিম্মি জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট শাহরিয়ার রাব্বীর মা বিলকিস রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মালিক প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে সোমালীয় জলদস্যু কর্তৃক মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তবে জিম্মি নাবিকদের পরিবারদের কাছে ফোন করিয়ে ৯ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চেয়েছে।”
মালিকপক্ষ মুক্তিপণের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন কিনা- প্রশ্ন করা হলে বিলকিস বলেন, “তারা কিছু বলতে চাইছেন না।”
ছিনতাই হওয়া জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড বরাবরই তাদের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
গত রোববার জাহাজে সর্বপ্রথম যোগাযোগ করে অবস্থানরত সোমালীয় জলদসুুদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়।
ব্রেভ রয়েলের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সোমালীয় দস্যুদের সঙ্গে আমাদের তিন দফায় কথা হয়েছে।”
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি।”
গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ভারতীয় জলসীমায় ছিনতাই হয় জাহান মনি। জাহাজটিতে প্রধান প্রকৌশলীসহ ২৫ জন নাবিক রয়েছেন। রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীও।
ছিনতাইয়ের পর জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে ভিড়িয়েছে দস্যুরা।

সোমালিয়া থেকে জলদস্যুরা যোগাযোগ করেছে’

Sun, Dec 12th, 2010 9:47 pm BdST
চট্টগ্রাম, ডিসেম্বর ১০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজের মালিক পক্ষের সঙ্গে সোমালিয়া থেকে জলদস্যুরা যোগাযোগ করেছে। তবে তারা এখনো মুক্তিপণ দাবি করেনি।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান চট্টগ্রামে রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে ‘গারাকাড’ নামে ছোট একটি মৎস্য গ্রামের কাছে নোঙ্গর করে আছে।
গত ৫ ডিসেম্বর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি জাহান মনি কোচিন বন্দর থেকে ৩০০ নটিক্যাল মাইল দুরে আরব সাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
রাত ৯টায় এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, রোববার দুপুর আড়াইটা ও রাত ৭টায় জলদস্যুরা রোমিং ফোনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে।
“তবে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনোপ্রকার মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি।”
শাহজাহান ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মনি’র মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী কবির গ্র”পের চেয়ারম্যান।
ছিনতাই হওয়া জাহাজের ২৫ জন ক্রু এবং প্রধান প্রকৌশলির স্ত্রী ভালো আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
শাহজাহান জানান, তারা জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলি মতিউল মাওলা এবং তার স্ত্রী রোকসানা গুলজারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
“জাহাজের অবস্থানরত সবাই সুস্থ আছেন বলে ফোনে তারা জানিয়েছেন।”
ব্রেভরয়েলের ব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম জানান, দুপুর আড়াইটায় প্রথমে একজন জলদস্যু ফোন করে ইংরেজিতে কথা বলেন এবং ক্যাপ্টেনসহ তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে দেন। জলদস্যু তার পরিচয় দেননি।
ক্রুদের ছাড়িয়ে নিতে কতোদিন লাগতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যত দ্রুততার সঙ্গে তাদের ছাড়িয়ে আনা যায় সেব্যবস্থা আমরা নেবো।
তাদের ওপর কোনো হামলাও করা হয়নি বলে জানান তিনি। সব ক্রুকে এমভি জাহান মনি’র ব্রিজে একটি কক্ষে এনে রাখা হয়েছে।

জাহাজটি সোমালিয়ায়

Sat, Dec 11th, 2010 11:35 am BdST

চট্টগ্রাম, ডিসেম্বর ১১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ছিনতাই হওয়া জাহান মনি-কে জলদস্যুরা সোমালিয়ায় নিয়ে গেছে বলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি মালিকরা জানিয়েছে।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেড উপগ্রহ থেকে পাওয়া চিত্র পর্যবেক্ষণ করে শনিবার বলেছে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ২৩ মিনিটে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছে।

ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজম্যান্টের মেরিন সুপারিটেন্ডেন্ট ক্যাপ্টেন মো. গোলাম মোস্তাফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জলদস্যুরা সোমালিয়ার উপকূলীয় গ্রাম গারাডের পূর্ব দিকে নিয়ে জাহাজটি নোঙর করেছে।
জাহাজে অবস্থানরত ক্রু বা জলদস্যু প্রতিনিধি- কারো সঙ্গেই এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শনিবার সকালেও জাহাজের স্যাটেলাইট টেলিফোনে কল করা হয়। তবে অন্য প্রান্ত থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।

পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন মোস্তফা বলেন, “জলদস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে আমরা উদ্যোগ নেবো।”
সরকারও জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনার পর মালিকপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলে জানান তিনি।
গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ভারতীয় জলসীমায় ২৫ জন ক্রু এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ ‘জাহান মনি’ ছিনতাই হয়।
এরপর থেকে জাহাজের ক্রুরা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন।

ক্যাপ্টেন মোস্তফা জানান, জাহাজে থাকা ক্রুদের পরিবারের উদ্বিগ্ন সদস্যরা মালিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

তিন মন্ত্রীর ব্রিফিং

জাহাজ ও পণবন্দি উদ্ধারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে

জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী সকল নাবিকই সুস্থ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মুখ্য নির্বাহীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানান। নৌমন্ত্রী জানান, নাবিকদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখছেন। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী জানান, অতীতে জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ দখলের অনেক ঘটনা ঘটলেও প্রাণনাশের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জলদস্যুদের একমাত্র লক্ষ্য মুক্তিপণ আদায়। আন্তর্জাতিক আইনে মুক্তিপণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, জাহাজটি তীরে পেঁৗছতে আরও চার দিন সময় লাগবে। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে নিকেলের আকরিক নিয়ে গ্রিসে যাচ্ছিল। এর আগে দুই ঘটনায় ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক জলদস্যুদের কবলে পড়েন।

আস্তানায় পেঁৗছতে আরও ৪ দিন লাগবে

চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে সারোয়ার সুমন জানান, নিজেদের আস্তানায় জাহাজ নিতে আরও চার দিন লাগবে দস্যুদের। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সোমালিয়ান জলদস্যুদের আস্তানা গালফ অব এডেন থেকে সাড়ে আটশ’ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। দুবাইভিত্তিক পাইরেসি মনিটরিং সেল ইউকে এমটিও এবং বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর জাহাজটির গতিবিধি নজরে রেখেছে।
ছিনতাই হওয়া জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকালও জিম্মিদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, জাহাজটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সোমালিয়ান আস্তানায়। ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল বেগে চলা এ জাহাজটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভারতের লাক্ষাদ্বীপ সংলগ্ন ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০০ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। তবে তাদের আস্তানায় যেতে আরও অন্তত চার দিন অপেক্ষা করতে হবে দস্যুদের।
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ ছিনতাই করার আগে চলতি বছরের ৬ মে ১১ জন সোমালিয়ান জলদস্যুরা ছিনতাই করে রাশিয়ান অয়েল ট্যাঙ্কার ‘এমভি মস্কো ইউনিভার্সিটি’। এতে ২২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৮৬ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল ছিল। ১১ মে ১৫ বুলগেরিয়ান নাবিক ও ক্রুসহ ছিনতাই করা হয় ‘দি পানিগা’ নামের জাহাজ। পরদিন ২৪ নাবিক ও ক্রুসহ ছিনতাই করা হয় গ্রিসের একটি জাহাজ। আটককৃতদের মধ্যে দু’জন গ্রিস ও অন্যরা ফিলিপাইনের নাগরিক। এর আগের বছরও গালফ অব এডেনে সক্রিয় ছিল জলদস্যুরা। ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল ১৭ হাজার মেট্রিক টন কার্গোবাহী জাহাজ ‘মার্কস এলাবামা’কে ছিনতাই করে তারা। এর ঠিক ৮ দিন পর গালফ অব এডেন এলাকায় তারা আটক করে ডাচ পতাকাবাহী ‘হ্যান্ডি ট্যাঙ্কার্স ম্যাজিক’। একই বছরের ৮ নভেম্বর জলদস্যুরা জাহাজ থেকে অপহরণ করে ব্রিটিশ দুই নাগরিককে। এভাবে গত ১০ বছরে অন্তত ২২টি জাহাজ ছিনতাই করে ৫২১ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করে জলদস্যুরা আদায় করে মুক্তিপণ। সমুদ্র এলাকায় জলদস্যুদের উৎপাত এভাবে বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, গ্রিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একত্রিত হয়ে গালফ অব এডেনে গড়ে তুলেছে অ্যান্টি টেররিস্ট সিকিউরিটি বেল্ট। আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যে নিয়োজিত যে কোনো জাহাজ সোমালিয়ান উপত্যকা দিয়ে যেতে হলে বিশেষ এ সিকিউরিটি ফোর্সকে অবহিত করে। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে তারা গালফ অব এডেন অতিক্রম করতে সহায়তা করে। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশেষ এ সিকিউরিটি ফোর্স জাহাজকে স্কট দিয়ে পার করিয়ে দেয় জলদস্যুদের আস্তানা। তারপরও ঘটতে থাকে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সর্বশেষ এমন আক্রমণের শিকার হয় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মনি। তবে গালফ অব এডেনে নয়, বাংলাদেশি জাহাজকে ছিনতাই করতে তারা আসে ১২০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারতের লাক্ষাদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায়। গালফ অব এডেনে জোরদার হওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতেই এত দূরে এসে জাহাজ ছিনতাই করল সোমালিয়ান জলদস্যুরা।[সমকাল]

—————————————————————————————————————————

নাবিকদের নিয়ে উৎকণ্ঠা
জলদস্যুরা বাংলাদেশী জাহাজটি সোমালিয়া নিয়ে যাচ্ছে

০০ এজাজ হোসেন

ভারতীয় সমুদ্রসীমায় আরব সাগরে জলদস্যুকবলিত বাংলাদেশী সমুদ্রগামী জাহাজ ‘জাহানমণি’ সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এর অবস্থান ছিল ভারতের কোচিন বন্দর থেকে ৪৩০ নটিক্যাল মাইল বা ৭০০ কিলোমিটার দূরে।

চট্টগ্রামে অবস্থিত মার্কেন্টাইল মেরিন বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান গতকাল টেলিফোনে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, আমরা সার্বক্ষণিকভাবে জাহাজটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছি। ইনমার্ট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলছে এই পর্যবেক্ষণ কাজ। সারাদিন জাহাজটির গতিপথ ছিল একটু উত্তর-পশ্চিম দিকে। তখন জলদস্যুরা জাহাজটি নিয়ে আসলে কোথায় যেতে যাচ্ছে সেটি নিয়ে আমাদের মধ্যে খানিকটা উদ্বেগ তৈরি হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এটি ১১ নটিক্যাল মাইলবেগে সরাসরি পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকে। এ থেকে মনে হচ্ছে এটি সোমালিয়ার দিকেই যাচ্ছে। যে গতিতে এটি অগ্রসর হচ্ছে, যদি সেটি অব্যাহত থাকে তাহলে ১১ ডিসেম্বর সকালে জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে পেঁৗছতে পারবে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় জাহাজটি যে অবস্থানে ছিল সোমালিয়া উপকূল সেখান থেকে ১৭০০ কিলোমিটার দূরে।

এই প্রথম বাংলাদেশের কোন বাণিজ্য জাহাজ জলদস্যুতার শিকার হলো। ৪৩ হাজার টনের বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজটিতে ২৫ জন কর্মকর্তা ও নাবিক রয়েছে। আরও রয়েছেন জাহাজের প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী। তারা সবাই বাংলাদেশী। জাহাজটির ক্যাপ্টেন হলেন ফরিদ আহমেদ ও প্রধান প্রকৌশলী মতিউল মওলা। জাহাজের অফিসার ও নাবিকদের নিয়ে তাদের পরিবার- পরিজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ব্রেভ রয়াল শিপিং লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটে আমাদের সঙ্গে মুম্বাইয়ের মেরিন রেসকিউ এন্ড কো-অর্ডিনেশন ইউনিটের (এমআরসিসি) সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, এই মুহূর্তে জাহাজটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। অন্য কিছু করতে গেলে জাহাজের নাবিকদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তিনি আরও জানান, জাহাজটি রবিবার জলদস্যুদের কবলে পড়া থেকে প্রতি দু’ ঘণ্টা পর পর আমরা এমআরসিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুরভিত্তিক রিজিওনাল কো-অপারেশন এগেইনস্ট এন্টি রবারি এন্ড পাইরেসি (আরইসিএএপি), দুবাইভিত্তিক ইউকে মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মেহেরুল করিম উলেস্নখ করেন, এ পর্যন্ত জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি। ধারণা করছি সোমালিয়ার উপকূলে যাওয়ার পর এ ধরনের যোগাযোগ হতে পারে।

এদিকে জাহাজটি উদ্ধারের জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খান। সোমবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব.) বজলুর রহমান রাতে ইত্তেফাককে বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত জাহাজটির সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি নি।

এদিকে সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সকালে ভারতীয় কোস্টগার্ড জলদস্যু কবলিত জাহাজটিকে সাহায্য করার জন্যে হেলিকপ্টার অথবা জাহাজ পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু পরে দূরত্বের কথা বিবেচনা করে উদ্যোগটি বাতিল হয়।