নিরামিষ আহারে ভাল থাকে দেহ


প্রচলিত অর্থে আমরা বলে থাকি নিরামিষাশী। এটি এমন একটি খাদ্যতালিকা, যেখানে মাংস নেই। (কোনো পশুর কাটা মাংসের যেকোনো অংশ বা তা থেকে তৈরি যেকোনো খাদ্য, মাছসামুদ্রিক বা পোলট্রিজাত সবকিছু বর্জন)। তবে এতে আবার কয়েক গ্রুপ পাওয়া যায়, কেউ কেউ ডিম এমনকি প্রাণিজ খাবার, যেমন-ডেইরি প্রোডাক্টস, মধু-এসবও বাদ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন মতের নিরামিষাশী পাওয়া যায়

ভেগানিজম-সব প্রাণিজ খাবার বাদ। এটা যেকোনো প্রাণীকে ব্যবহার না করার বৃহত্তর অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ওবো ভেজিটেরিয়ানিজম-ডিম চলে, তবে ডেইরি প্রোডাক্টস নয়।

ল্যাকটো ভেজিটেরিয়ানিজম-ডিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস খাদ্যতালিকায় যুক্ত আছে।

নিরামিষ-আহারির প্রকারভেদ

এদের বলা হয় উদ্ভিদাশ্রিত খাবারের ওপর নির্ভরশীল মানবগোষ্ঠী। তাদের কেউ কেউ শুধু ফলমূলে নির্ভর করে থাকে (ফল, শস্যদানা), তবে উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি না করে। কেউ বা শুধু কাঁচা ফলমূল খায়। কেউ খেয়ে থাকে ম্যাক্রোবায়োটিক ডায়েট (শস্যদানা, মাঝেমধ্যে মাছ)। কেউ বা সব ধরনের পশুর মাংস বর্জন ছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন এসব খাদ্যতালিকায় রাখে না।

স্বাস্থ্যসুবিধা

আমেরিকা ও কানাডার ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিয়মমাফিক নিরামিষ-জাতীয় খাদ্যতালিকা জীবনের সব বয়সে, সব পুষ্টিমাত্রা বজায় রাখতে সমর্থ। এতে ক্যানসার ও হূদেরাগের ঝুঁকি কম থাকে। আমিষ গ্রহণকারী ব্যক্তির তুলনায় অনেক সুফল এরূপ খাদ্যাভ্যাস থেকে মেলে।

রক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে;

 শারীরিক স্থূলতা * বিএমআই নিয়ন্ত্রণে থাকে;

  • রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রিত;
  • ভিটামিন সি উচ্চমাত্রায় মেলে। কোষ বিনষ্টকারী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আঁশ, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফলেইটএসব পুষ্টিমান বজায় থাকে।

নিরামিষাশীর জন্য যেসব খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ বেশি জোগান দিতে হয়

আয়রন: আয়রন-ঘাটতিজনিত সমস্যায় শিশু ও নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

ভিটামিন বি১২: উদ্ভিজ খাবার সচরাচরভাবে বি১২-এর ভালো উৎস নয়; যদিও ডিম বা ডেইরি প্রোডাক্টসে তা বেশ পাওয়া যায়।

  • ফ্যাটি অ্যাসিডস-ঘাটতি ঝুঁকি।
  • ক্যালসিয়ামযদি না প্রচুর পরিমাণ সবুজ পাতা বা সবজি খায়, তবে ঘাটতিতে পড়ে।
  •  জিংক * উদ্ভিজ খাবারের ফাইটেট ও আঁশ শরীরে জিংক শোষণে কিছু বাধা দেয়। ফলে এরূপ খাদ্যাভাসে যারা অভ্যস্ত, তারা জিংক-ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকে।

প্রণব কুমার চৌধুরী

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

পনির বেশি খেলে পুরুষের প্রজননক্ষমতা কমে!

নিউজমিডিয়াবিডি.কম, ২৬ অক্টোবর : পনির বেশি খেলে পুরুষের প্রজননক্ষমতা কমে যায়। যেসব তরুণ নিয়মিত পনির খান, তাঁরা হয়তো বাবা হওয়ার ক্ষমতা হারাতে পারেন। এমনই দাবি করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরোপুরি চর্বিসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ অল্প হলেও তা পুরুষের প্রজননক্ষমতা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দেয়। যাঁরা প্রতিদিন তিন টুকরার বেশি পনির খান, তাঁদের শুক্রাণু অন্যদের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য অনুষদের এক দল গবেষক। তাঁরা ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়স্ক ১৮৯ জন পুরুষের ওপর গবেষণাটি করেন। এসব পুরুষের সবাই বেশ সুস্থ-সবল এবং প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন। গবেষণার অংশ হিসেবে তাঁদের একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে দেওয়া হয়। খাবারের তালিকা নিয়ে ছিল এসব প্রশ্ন। এক সপ্তাহে তাঁরা কী পরিমাণ দুগ্ধজাত খাবার, ফলমূল, মাংস এবং অন্যান্য খাবার খেয়েছেন, তা ওই প্রশ্নপত্রে ছিল। একই সঙ্গে গবেষকেরা তাঁদের শুক্রাণুর গুণগত মান নিয়েও গবেষণা করেন। এর গঠন এবং গতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমাণে বেশি চর্বিসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার খেয়েছেন, এমন তরুণদের শুক্রাণুর গুণগত মান, যারা পরিমিত বা কম খেয়েছেন, তাঁদের চেয়ে ২৫ শতাংশ দুর্বল।
শুধু পনির নয়, অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারও একই রকম প্রভাব ফেলে। ২৮ গ্রাম পনির, এক চা-চামচ ক্রিম, এক স্কুপ আইসক্রিম অথবা এক গ্লাস ননিসমৃদ্ধ দুধ একই সমান ক্ষতি করে থাকে।
গবেষকেরা বলেন, দুগ্ধজাত পণ্য নারীদের হরমোনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলেও পুরুষের ক্ষেত্রে উল্টো প্রতিক্রিয়া করতে পারে। পিটিআই।


নাস্তায় ফল খেলে ওজন কমে

নিউজমিডিয়াবিডি.কম, ৩০ জুন : ওজন কমানোর জন্য যারা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলেছেন তাদের জন্য সুখবর। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে সকালের নাশতায় ফলমূল ও মিষ্টান্ন খেলে সমস্যা নেই। এ ধরনের নাশতায় একই সঙ্গে পছন্দের খাদ্য খাওয়ার স্বাদ মেটে,আবার ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে না। ওজন কমার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পেতে এমন খাদ্যাভ্যাস বেশ কার্যকরী।

বিজ্ঞানীরা ২০০ মোটা লোকের ওপর গবেষণাটি চালিয়েছেন। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা নেই তাদেরকে দুটি দলে করে তিন মাস খাবার খাওয়ানো হয়। প্রথম দলটির খাবারে রাখা হয় বেশি ক্যালরি (৬০০ কিলোক্যালরি),দ্বিতীয় দলটির খাবারে রাখা হয় কম ক্যালরি (৪০৪ কিলোক্যালরি)।দেখা গেছে দু’দলের ওজনই নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রধান গবেষক ও ইসরায়েলের তেলআবিব ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা.ডানিয়েল জ্যাকুবিয়েচ বলেন, “ওজন নিয়ন্ত্রণে এই খাদ্যাভ্যাস বেশ কার্যকরী।” স্টেরয়েড নামের একটি জার্নালের গত মার্চ সংখ্যায় গবেষণার ফলটি প্রকাশিত হয়।

ঘুম না হলে দুধ-কলা খান

নিউজমিডিয়াবিডি.কম, ৬ জুলাই : ট্রাইপটোফানযুক্ত খাবার ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে বিশেষজ্ঞরা জনিয়েছেন। যারা নিদ্রা নিয়ে সংকটে ভুগছেন তারা যদি ট্রাইপটোফানযুক্ত খাবার খান তাহলে এ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাইপটোফান হলো দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত ১০  অ্যামোইনো এসিডের অন্যতম। দেহে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন নামের হরমোনের মাত্রা বাড়াতে এ উপাদান বিশেষ সহায়তা করে। বিশ্রাম ও ঘুমের সঙ্গে এ দুই হরমোনের সম্পর্ক আছে। দেহে ট্রাইপটোফানের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে  গেলে একই সঙ্গে সোরোটিনের মাত্রা কমে যাবে। এ কারণে হতাশা ও উদ্বেগ অনর্থক বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে; দেখা দিতে পারে অধৈর্য। একই সঙ্গে নিদ্রাহীনতা এবং গভীর ঘুম না হওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। দুধ-দই-পনিরসহ সব দুগ্ধজাত খাবারে ট্রাইপটোফান পাওয়া যায়। এ ছাড়া, কলা, মুরগির গোশত, ডিম, বেগুন এবং পালংয়েও এ উপাদান আছে। আরো যেসব খাবার-দাবারে ট্রাইপটোফান পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে কলা, বাধাকপি, সয়াবিন, চিংড়ি, ভেড়ার গোশত প্রভৃতি। রান্না-বান্নাসহ খাবার প্রক্রিয়াকরণ বা মজুদ করার ফলে এ উপাদান নষ্ট হয় বলে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অবশ্য, দীর্ঘদিন ধরে যারা নিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের শুধু এসব খাবার-দাবারের ওপর নির্ভর না করে এবং অনর্থক দেরি না করে যোগ্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

একাকী বসবাসকারী হৃদরোগী দ্রুত মারা যান !

 

নিউজমিডিয়াবিডি.কম ডেস্ক, ১৯ জুন :
নিঃসঙ্গতা শুধু কষ্টদায়কই নয় জীবনের জন্যেও হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। যারা দীর্ঘ সময় একাকীত্ব জীবনযাপন করেন তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ৪৪ হাজারের বেশি হূদরোগীর ওপর চালানো আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য পাওয়ার কথা দাবি করেছেন গবেষকেরা।
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসাসাময়িকী দি আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত এই সমীক্ষা-বিষয়ক নিবন্ধে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়। একদল মার্কিন গবেষক সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
গবেষকদের ভাষ্য, হূদরোগীদের মধ্যে যাঁরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকেন, মনের কথা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন, তাঁদের চেয়ে একাকী জীবনযাপন করা ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
গবেষকদের তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৪ হাজারের বেশি হূদরোগীর ওপর দীর্ঘ চার বছর ধরে এই সমীক্ষা চালানো হয়। যাঁরা এ রোগে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়।সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবার বয়স ৪৫ বছর বা এর বেশি।
প্রাপ্ত ফলাফল থেকে গবেষকেরা দাবি করেছেন, গত চার বছরে একা বসবাস করা ৬৫ বছরের চেয়ে কম বয়সী হূদরোগীর মধ্যে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সে তুলনায় স্বজনদের সঙ্গে বাস করা একই বয়সী হূদরোগীর মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
৬৬ থেকে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিরা এমনিতেই আয়ুষ্কালের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যান। বয়স, লিঙ্গ, কর্মসংস্থান, জাতি, দেশ প্রভৃতি বিবেচনায় নেওয়ার পরও দেখা গেছে, সামাজিকভাবে একাকী বসবাসকারী হূদরোগীরা দ্রুত মারা যান। তবে ৮০ বছরের বেশি বয়সী হূদরোগীদের ওপর একাকী থাকা বা পরিবারসহ থাকার বিষয়টি তাঁদের মৃত্যুতে কোনো প্রভাব ফেলে না বলেও তাঁরা দাবি করেন।
সামাজিকভাবে একাকী বা অন্যদের সঙ্গে থাকার কারণে কেন হূদরোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কমবেশি হয়—এর কারণ সমীক্ষায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধান গবেষক বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিশেষজ্ঞ দীপক ভাট বলেন, এর সঙ্গে নিয়মিত চিকিত্সা সেবা নেওয়ার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে। তিনি বলেন, যেসব হূদরোগী একা বসবাস করেন, তাঁদের নিয়মিত ওষুধ সেবন বা ওষুধ শেষ হয়ে গেলে তা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমনকি হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের চিকিত্সকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ঘরে থাকে না।
দীপক ভাট ও তাঁর সহযোগী গবেষকদের ধারণা, ৮০ বছরের কম বয়সী হূদরোগী যাঁরা একা বাস করেন, তাঁদের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কিছু সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যেমন কাজের চাপ বা একাকিত্ব। অধিক বয়স্ক যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের মধ্যে এর বিপরীত চিত্রটিও দেখা যেতে পারে। তাঁরা সমবয়সী অন্য হূদরোগীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন এবং একাকী নিজের মতো করে স্বাবলম্বী জীবনযাপন করতে পারেন।