একুশ নিউজ মিডিয়াঃ লস এঞ্জেলেস, ২৪ জুন:বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করা, সহায়তা ও পরামর্শ দিতে লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্ণিয়া, ইউ এস এ-তে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডাইভার্সিটি আর্টস অ্যান্ড মিডিয়া (বাদাম BADAM)। স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সাংবাদিক, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ ও সুধীজন এই আলোচনা সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে ‘বাদাম’ -এর প্রতি সম্পৃক্ততা ঘোষণা করেন।
রবিবার লিটল বাংলাদেশ এলাকায় আলাদীন রেস্তোরায় এক আলোচনা সভার মাধ্যমে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উদ্যোক্তারা এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। প্রবাসের মূলধারায় দেশীয় বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে দেশ-প্রবাসের কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সাংবাদিক, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদদের যোগসূত্র হিসাবে কাজ করবে এই সংগঠন।
সুদীর্ঘ সময় পরে হলেও নতুন প্রজন্মের সাথে আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির পরিচয় ও তাদেরকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বাদাম-নতুন প্রজন্ম’ নামে সংগঠনের একটি শাখা খোলার প্রস্তাবনা করা হয়। প্রতিমাসে একবার করে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে স্কুলশিক্ষার আদলে ইন্টারএক্টিভ কর্মশালার প্রস্তাব করা হয়।
কাজী মশহুরুল হুদার সঞ্চালনায় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের অতীত-বর্তমান-ভবিষৎ নিয়ে আলোচনা করেন মিজান শাহীন, কাজী রহমান, আলী আশরাফ রুনু, ডাঃ নাসির আহমেদ অপু, একতার ভূঁইয়া, সৈয়দ এম হোসেন বাবু, তারিক বাবু, ফ্রেন্ডস বাবু, দিলশাদ রহমান, মার্টিন রহমান, মিঠুন চৌধুরী, রওনাক সালাম, বুলবুল সিনহা, আব্দুল খালেক, স্যামী নোবেল, খাজা মইনুদ্দীন চিশতী, শহীদ আলম, শাহানা পারভীন, সাদিয়া রহমান, জাবিন হিল্টন, মাহবুবা রশীদ, শামসুন্নাহার মনি প্রমুখ।
ফারহানা সাঈদ সবার বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরে বলেন, সবার বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা -সংস্কৃতি সার্বজনীন, বহমান সংস্কৃতিকে মূলধারার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করে নিজ দেশের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে।
বাদাম-এর প্রধান উপদেষ্টা এম কে জামান নান্টু তার বক্তব্যে বলেন, লস এঞ্জেলেস এ কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সাংবাদিক, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদদের এক অপূর্ব সম্মীলন ঘটাবে এই বাদাম। বাদাম ও স্থানীয় বাংলাদেশী ডাক্তারদের সহযোগীতায় লিটল বাংলাদেশ-এ ফ্রি সানডে ক্লিনিক খোলার ঘোষণা দেন তিনি।
নব গঠিত বাদাম’র আহ্বায়ক জাহান হাসান সভার শেষে সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমেরিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় এই ধরনের একটি শক্তিশালী সাহিত্যিক-সামাজিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরে অনুভূত হচ্ছিল। অনেক প্রবাসী তাদের নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল হলেও সংস্কৃতি প্রসারে নিরপেক্ষ প্লাটফর্মের অভাবে এগিয়ে আসতে পারছেন না। তাদের অভিজ্ঞতা, সার্মথ্য ও দেশকে ভালবাসা বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এই বাদাম। নিয়মিতভাবে প্রবাস ও দেশের গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করার ঘোষণা দেন তিনি।
২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে বাদাম’র কাজ শুরু করেছে। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে বিভিন্ন ষ্টেটে কমিটি গড়ে পর্যায়ক্রমে সারা উত্তর আমেরিকায় সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে। ঈদের পরে স্থানীয় প্রবাসীদের সামনে পূর্নাংগ কমিটি ঘোষণা করা হবে। সংগঠনের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পর্যায়ের প্রবাসীদের সহায়তা কামনা করে জানান, কবি,সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদদের সমন্বয়ে সংগঠনটি গঠিত হলেও বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য গড়তে কাজ করতে ইচ্ছুক যে কেউই এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রবাসে শিল্পকলা প্রসারে বাদাম-এর মত সংগঠনের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সংগঠনের কয়েকজন পরিচালকের সাথে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।
হলিউড, ২ আগস্ট (জাহান হাসান, একুশ নিউজ মিডিয়া):কর্মের মাধ্যমে বেঁচে আছেন ও থাকবেন ক্ষণজন্মা এই কৃতি পুরুষ। অনন্য সাধারণ সহজভাষা ও সাবলীল রচনাশৈলী দিয়ে এক নিশ্বাসে একটি বই, এক বসায় একটি নাটক, এক যতিতে একটি চলচ্চিত্র দিয়ে শহর থেকে প্রান্তিক গরীব মানুষ পর্যন্ত সকলের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন হুমায়ুন আহমেদ।। তাই তার মৃত্যুর পর তিনি দেশ ও প্রবাসীদের মনে কান্নার শোয়াচাঁন পাখি হিসাবে অনুরণিত হচ্ছেন।
সদ্য প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিকের স্মরণে গত ২ আগষ্ট লস এঞ্জেলেসের হলিউডে স্টার অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ডাইভার্সিটি আর্টস এন্ড মিডিয়া (বাদাম) একটি নাগরিক শোক সভার আয়োজন করে। শোক সভায় লস এঞ্জেলেস কমিউনিটির কবি-সাহিত্যিক,অধ্যাপক, রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জীবন ও সাহিত্যের ওপর আলোকপাত করে মননশীল ও আবেগগঘন বক্তব্য রাখেন স্থানীয় প্রবাসীবৃন্দ। বক্তারা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য কর্মের মধ্য দিয়ে। বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো তার এই অকাল তিরোধানে। হুমায়ুন আহমেদ জীবদ্দশায় তার মেধা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সৃজনশীল করেছেন, সুবিশাল পাঠক-গোষ্ঠির সৃষ্টির সাথে সাথে বইমুখী করেছেন ধৈর্যের অভাববোধে তাড়িত সাধারণ পাঠকদের। বাংলা সাহিত্যের নবাগত ও অনাগত লেখকদের পথে আলোকবর্তিতা জ্বালিয়ে গেছেন নীরবে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে দিয়েছেন শক্ত ভিত, প্রকাশনা শিল্পকে দিয়েছেন প্রাণ। চলচ্চিত্রশিল্পকে দিয়েছেন আশার আলো। ভবিষৎ প্রজন্মের সামনে এক অনন্য-সাধারণ উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন এই নন্দিত কথাশিল্পী। বাংলাদেশ কন্স্যুলেট অব লস এঞ্জেলেসের মাননীয় কন্সাল জেনারেল মোঃ এনায়েত হোসেন অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে হুমায়ুন আহমেদের প্রতীক প্রতিকৃতির সামনে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে এই স্মরনসভার উদ্বোধন করেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্ষণিকের নীরবতার মাধ্যমেহুমায়ুন আহমেদকে স্মরণ করা হয়। কথাশিল্পী, মনস্তত্ত্ববিদ এবং দার্শনিক হুমায়ুন আহমেদের অনবদ্য চরিত্র যুক্তিবাদী হিমুর স্মরণে ‘আজ হিমুর বিয়ে’ উপন্যাস থেকে আবৃত্তির মাধ্যমে বাদাম-এর এই ব্যতিক্রমী সন্ধ্যা শুরু হয়। ইফতারের আয়োজনের পূর্বমূহর্তে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন কন্সাল জেনারেল মোঃ এনায়েত হোসেন। ইফতারির পরে হুমায়ুন আহমেদের জীবনী নিয়ে সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু নির্মিত একটি তথ্যচিত্র উপস্থিত অনেককেই আবেগাপ্লুত করে তুলে।
প্রধান বক্তা কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণ সাহিত্য-সংষ্কৃতির প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বাদাম-এর এই ব্যতিক্রমী সন্ধ্যার জন্য সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, লোভনীয় অধ্যাপনা জীবন থেকে বেরিয়ে এসে জীবনমুখী আপন সাম্রাজ্যের প্রভু হিসাবে প্রাত্যহিক জীবন সঙ্কটগুলির মাঝে সূক্ষ্ম সুখ আর দুঃখ যন্ত্রণাগুলিকে কাছে থেকে নিবিড়ভাবে অনুভব করে নিজস্ব আঙ্গিকে সাবলীলভাবে তুলে এনেছেন তার কর্মে, যা অবিনশ্বরভাবে সকলের মন হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
তার অবচেতন মনের গভীর মূল্যবোধ, সামাজিক অবক্ষয়য়ের মাঝে সমাজচেতনা হুমায়ুন আহমেদকে এক স্বতন্ত্র ঐশ্বর্যমন্ডিত লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে ও কবিপ্রতিভার মিলনগাথায় সাংগৃতিক নন্দনতত্বে সমন্বিত হয়ে প্রকাশ হয়েছে। গ্রামবাংলার শান্ত সরলতা ও গ্রামের ছোট-খাট সামন্তপ্রভূদের জীবনের স্বেচ্ছাচারী বিলাসিতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করে তার লেখনীতে তুলে এনেছেন জীবনঘনিষ্ঠ রূপকার হিসাবে। তাই তার প্রায় গল্পে, নাটক ও চলচ্চিত্রে এই ধরনের ছোট-খাট অনুষঙ্গ, যেমন ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড বাজানোর সার্থক সূচনার মাধ্যমে বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে তুলে আনার প্রয়াসে গনমানুষের স্বপ্নকে লেখক নিজের বাস্তব স্বপ্নীল লেখনীতে ধারণ করেছেন।
আমরা যেমন করে আমাদের কবি-সাহিত্যিকদের ভুলিনি, আমাদের গর্ব রবীন্দ্র-নজরুল-শরৎ-বিভুতি-বঙ্কিম-মানিকদের ভুলিনি, যদিও তারা তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জীবনের মোড়কে, হুমায়ুন আহমেদ নিজেকে নিয়ে গেছেন ধনী থেকে প্রান্তিক গরীব মানুষের অন্তরে। এইভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে যুগ-যুগ ধরে। হুমায়ুন আহমেদদের মরণ হয়না।
কন্সাল জেনারেল মোঃ এনায়েত হোসেন বলেন, অনিশ্চিত, অবধারিত মৃত্যু জেনেও যারা কর্মকে আলিঙ্গন করে তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন তারা অমর হয়ে থাকেন শত-শত বছর ধরে। বিশ্বসাহিত্য থেকে বিশেষ করে রাশিয়ান ও স্প্যানিশ সাহিত্য হতে নির্যাস এনে অসাধারণ মেধাবী হুমায়ুন আহমেদ আমাদের সাহিত্যে প্রবৃষ্ট করে সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার ধর্ম ও ঈশ্বরপ্রীতির বর্ননা দিতে গিয়ে ষ্টীভেন হকিংয়ের এন্ড অফ লাইফের বিষয়ে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, এই জীবনই শেষ নয়, আমরা সবাই ফিরে যাব সেই মহা স্রষ্টার কাছে। তার বিজ্ঞানমনস্কতা, উদার মননশীলতা, প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ ও জোসনার প্রতি ভালোবাসা আমাদের নিজেদেরকে জটিল ভাবনায় না ফেলে সহজ সরল সমাজবোধ, স্নেহ মমতায় অনুরাগে সিক্ত করে।
হুমায়ুন আহমেদ স্মরণে একটি ইন্সটিটিউশন, যাদুঘর, গবেষণা কেন্দ্র করার জন্য আহ্বান জানান কাজী মশহুরুল হুদা। তিনি বলেন, হুমায়ুন আহমেদের অবিক্রীত চিত্রকর্ম যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য অতি সত্বর তার চিত্রকর্মগুলিকে নিউইয়র্ক থেকে উদ্বার করে বাংলাদেশে সংরক্ষণ করার আহ্বান জানানো হয়।
হুমায়ূন আহমেদের বিপুল রচনাবলির ইংরাজী ও অন্য ভাষায় ভাষান্তরিত করে তার সাহিত্য কর্মকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিবার জন্য ক্যালিফোর্ণিয়া প্রবাসীদের সহযোগিতায় হুমায়ুন আহমেদ স্মরণ ডট কম নামে একটি ওপেন ওয়েবপোর্টাল স্থাপন করার ঘোষণা দেন এম হোসেন বাবু।
স্নেহাশিষ প্রিয় বড়ুয়া বলেন, জাতির মনের খোরাকের ভূমিকায় তিনি যা রেখে গেছেন তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মনের উৎকর্ষতা বাড়াবে। হুমায়ুন আহমেদকে জাতীয় লেখক হিসাবে স্বীকৃতি দানের জন্য আর্টেশিয়ার লিটল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হুমায়ুন আহমেদ স্মরণ সভা থেকে উত্থাপিত দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে একটি খসরা স্মারকলিপি তৈরি করা হয়েছে যা প্রবাসীদের সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে শীঘ্রই স্থানীয় কন্সুলেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে প্রেরণ করা হবে ।
হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যকে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছে তা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রবাসে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় নাটকগুলিকে নতুন প্রজন্ম ও বিদেশীদের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সাব-টাইটেলসহ প্রচার করার জন্য টিভি ষ্টেশন ও নির্মাতাদের অনুরোধ করেন শাহানা পারভীন। পারিবারিক কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি থেকে সাধারণ মানুষের কাছে হুমায়ুনকে ফিরিয়ে দেবার সোচ্চার দাবী জানান তিনি।
জাহিদ হোসেন পিন্টু বলেন, হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্যকর্মে রবীন্দ্রনাথ, হাসন রাজার গানের উপযুক্ত ব্যবহার তার সৃষ্টিতে সার্বজনীনতা এনেছে।
সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু বলেন, স্বাপ্নিক হুমায়ুন আহমেদের দৃষ্টিপথে যুগোপযোগী ধারায় তার দর্শনকে নুহাশপল্লীতে সংরক্ষিত করার আহ্বান জানান।
১৯৯৩ সালে ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হবার পর ২০০৩ সনে ইংরাজিতে অনুদিত ‘ইন ব্লিসফুল হেল’ নামে বইটি বিদেশেও আলোড়ন তোলে বলে জানান, এক কালের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক মোবারক হোসেন বাবলু। তার বইয়ের অনুবাদ হুমায়ুন আহমেদকে বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় লেখক হিসাবে স্বীকৃতি বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হুমায়ুন আহমেদের প্রস্তাবিত ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান জনাব সরোজ।
ফয়সাল আহমেদ তুহিন সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের সময় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ননা করে বলেন, হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ আর ইসলামকে পৃথক করে দেখেননি। স্বকীয়তা বজায় রেখে তিনি আত্মার ক্ষুধা মেটনোর জন্য দীর্ঘ চল্লিশ বছর লিখে গেছেন বিশ্বের বিশিষ্ট রম্য লেখক হিসাবে।
গেরুয়া পোশাকের হিমু, স্পিরিট্যুয়াল মিছির আলী চরিত্রের মাধ্যমে একজন হুমায়ুন আহমেদ বাংলা ভাষা প্রেমী জনসাধারণের মনে যে জায়গা করে নিয়েছেন সেখান থেকে তাকে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ‘রুপা’ নামের উপন্যাস থেকে কিছু অংশ তিনি পাঠ করেন।
তারেক বাবু বলেন, নুহাশ আহমেদ তার বাবাকে সাবলীল ভাষায় যে শেষ চিঠি লিখেছে তাতে তিনি হুমায়ুন আহমেদের লেখনীর ছোঁয়া পেয়েছেন। তিনি বলেন, বাদাম এই শোকসভা আয়োজন করে হুমায়ূনভক্তদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে।
এম কে জামান বলেন, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আহমদ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন কথাশিল্পী নন, একজন বড়মাপের মনস্তত্ত্ববিদ এবং দার্শনিকও বটে। তার অভাব সহজে পূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি না।
বাদাম-বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ডাইভার্সিটি আর্টস এন্ড মিডিয়ার আহবায়ক জাহান হাসান বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সম্রাট হুমায়ুন আহমেদের অকাল প্রয়াণে সমগ্র বাঙালী জাতি আজ শোকাহত। প্রকাশকদের হিসেবে, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩২২ টি। বিক্রি হয় বছরে প্রায় আড়াই লাখ কপি। যা দেশে বিক্রি হওয়া মোট বইয়ের ৭৫ শতাংশ। শুধু সংখ্যাগত প্রাচুর্য নয়, শিল্পের নবমাত্রা সংযোজনে তার অবদান অসামান্য। হুমায়ুশ্র আহমদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্য ও বন্ধু বান্ধবদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা এবং পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
ছড়া কবিতায় শ্রদ্ধা জানান জাহাঙ্গীর বিশ্বাস ও কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুনের কবিতা আবৃত্তি করেন কানিজ ফাতেমা শিমুল। …আমার জীবন সন্ধ্যার নির্জন সমাপ্তি উৎসবে, নগর সভ্যতার বিদ্বেষ স্বার্থ শেষবারের মত তোমাদের সন্ধ্যাতারার কাব্যে গোপন রাখো। আমি এখন গল্প থামিয়ে নির্মোহে চলে যাবো, প্রিয় অপ্রিয় ধরিত্রী ছেড়ে-বিজন শান্তির পথে। তোমরা বাঁজাও, নিশ্চিন্তে বাঁজাও – বাউলের বাউন্ডুলে বেদনার একতারা। অনন্ত নীল থেকে ঝরে পড়তে দাও ক’ফোটা বৃষ্টির বরষা জলে…
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কাজী মশহুরুল হুদা, সহযোগীতা করেছেন জাহান হাসান।
একুশ নিউজ মিডিয়াঃ লস এঞ্জেলেস,২৪ জুন:বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করা,সহায়তা ও পরামর্শ দিতে লস এঞ্জেলেস,ক্যালিফোর্ণিয়া,ইউ এস এ-তেআত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডাইভার্সিটি আর্টস অ্যান্ড মিডিয়া (বাদামBADAM)।স্থানীয় কবি,সাহিত্যিক,দার্শনিক,সাংবাদিক,অভিনেতা,ক্রীড়াবিদ ও সুধীজন এই আলোচনা সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে‘বাদাম’ -এর প্রতি সম্পৃক্ততা ঘোষণা করেন।
রবিবার লিটল বাংলাদেশ এলাকায় আলাদীন রেস্তোরায় এক আলোচনা সভার মাধ্যমে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উদ্যোক্তারা এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।প্রবাসের মূলধারায় দেশীয় বাংলা সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে দেশ-প্রবাসের কবি,সাহিত্যিক,দার্শনিক,সাংবাদিক,অভিনেতা,ক্রীড়াবিদদের যোগসূত্র হিসাবে কাজ করবে এই সংগঠন। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি মাইলফলকেআলোচনা সভা সহ অনুষ্ঠানমালা করার ঘোষণা দিয়েছে ‘বাদাম’।
সুদীর্ঘ সময় পরে হলেও নতুন প্রজন্মের সাথে আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির পরিচয় ও তাদেরকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে‘বাদাম-নতুন প্রজন্ম’নামে সংগঠনের একটি শাখা খোলার প্রস্তাবনা করা হয়। প্রতিমাসে একবার করে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে স্কুলশিক্ষার আদলে ইন্টারএক্টিভ কর্মশালার প্রস্তাব করা হয়।
কাজী মশহুরুল হুদার সঞ্চালনায় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের অতীত-বর্তমান-ভবিষৎ নিয়ে আলোচনা করেন মিজান শাহীন,কাজী রহমান,আলী আশরাফ রুনু,ডাঃ নাসির আহমেদ অপু,একতার ভূঁইয়া,সৈয়দ এম হোসেন বাবু,তারিক বাবু,ফ্রেন্ডস বাবু,দিলশাদ রহমান,মার্টিন রহমান,মিঠুন চৌধুরী,বুলবুল সিনহা,আব্দুল খালেক,স্যামী নোবেল,খাজা মইনুদ্দীন চিশতী,শহীদ আলম,পঙ্কজ দাস,শাহানা পারভীন,সাদিয়া রহমান, জাবিন হিল্টন,মাহবুবা রশীদ,শামসুন্নাহার মনি, রওনাক সালাম, ফরিদা, প্রমুখ।
ফারহানা সাঈদ সবার বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরে বলেন,সবার বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা -সংস্কৃতি সার্বজনীন,বহমান সংস্কৃতিকে মূলধারার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করে নিজ দেশের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে।
বাদাম-এর প্রধান উপদেষ্টা এম কে জামান নান্টু তার বক্তব্যে বলেন,লস এঞ্জেলেস এ কবি,সাহিত্যিক,দার্শনিক,সাংবাদিক,অভিনেতা,ক্রীড়াবিদদের এক অপূর্ব সম্মীলন ঘটাবে এই বাদাম। বাদাম ও স্থানীয় বাংলাদেশী ডাক্তারদের সহযোগীতায় লিটল বাংলাদেশ-এ ফ্রি সানডে ক্লিনিক খোলার ঘোষণা দেন তিনি।
নব গঠিত বাদাম’র আহ্বায়ক জাহান হাসান সভার শেষে সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন,আমেরিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় এই ধরনের একটি শক্তিশালী সাহিত্যিক-সামাজিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরে অনুভূত হচ্ছিল। অনেক প্রবাসী তাদের নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল হলেও সংস্কৃতি প্রসারে নিরপেক্ষ প্লাটফর্মের অভাবে এগিয়ে আসতে পারছেন না। তাদের অভিজ্ঞতা,সার্মথ্য ও দেশকে ভালবাসা বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এই বাদাম। নিয়মিতভাবে প্রবাস ও দেশের গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানকরার ঘোষণা দেন তিনি।
২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে বাদাম’র কাজ শুরু করেছে। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে বিভিন্ন ষ্টেটে কমিটি গড়ে পর্যায়ক্রমে সারা উত্তর আমেরিকায় সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে। ঈদের পরে স্থানীয় প্রবাসীদের সামনে পূর্নাংগ কমিটি ঘোষণা করা হবে। সংগঠনের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পর্যায়ের প্রবাসীদের সহায়তা কামনা করে জানান,কবি,সাহিত্যিক,শিল্পী,সাংবাদিক,অভিনেতা,ক্রীড়াবিদদের সমন্বয়ে সংগঠনটি গঠিত হলেও বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য গড়তে কাজ করতে ইচ্ছুকযে কেউই এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রবাসে শিল্পকলা প্রসারে বাদাম-এর মত সংগঠনের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সংগঠনের কয়েকজন পরিচালকের সাথে ঢাকায় এক মত বিনিময় সভায় তিনি এই কথা বলেন।