…হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টার জন্য ১ লাখ টাকা,/৪৮ হাজার টাকা…

চাহিদা থাকলেও বাড়ানো যাচ্ছে না হেলিকপ্টার সেবা
মনজুরুল ইসলাম

প্রতিদিনের অসহনীয় যানজট এড়াতে সামর্থ্যবান ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুঁজছেন বিকল্প উপায়। এরই ধারাবাহিকতায় করপোরেট লেভেলে বৃদ্ধি পাচ্ছে হেলিকপ্টারের ব্যবহার। তবে চাহিদা বাড়া সত্ত্বেও কয়েকটি প্রতিবন্ধকতায় বাড়ানো যাচ্ছে না এ সেবার পরিধি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে মূল বাধা হচ্ছে সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব এবং জ্বালানি সংকট। দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার এয়ার লিমিটেড এবং সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের দাবি, হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে।
হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দুটি সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ, সিনেমার শুটিং, প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ছবি তোলা ইত্যাদি নানা কাজের লক্ষ্য নিয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দ্রুত যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য জনপ্রিয় হচ্ছে হেলিকপ্টার সেবা।
স্কয়ার এয়ার লিমিটেডের ডিরেক্টর অপারেশন অ্যান্ড চিফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) জাফর বণিক বার্তাকে জানান, অসহনীয় যানজটের কারণে ঢাকার বাইরে কোথাও যেতে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় অনর্থক নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে অনেক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন।
কিন্তু প্রতি ফ্লাইটের জন্য অনুমতি নিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে সম্ভাবনাময় এ খাত। ক্যাপ্টেন জাফর বলেন, প্রতি ফ্লাইটের জন্যই সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। আর এ অনুমতির জন্য ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে সময় বাঁচাতে হেলিকপ্টার ভাড়া নিচ্ছেন গ্রাহকরা। সে ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অনুমতির জন্য ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে গেলে যাত্রীর ক্ষতি হয়ে যায়। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটের জন্য সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
ক্যাপ্টেন জাফর আরও বলেন, অনুমতির ব্যাপারটা সহজ করলে হেলিকপ্টার সার্ভিস আরও ভালোভাবে গড়ে উঠবে। ফলে করপোরেট কাজে ব্যবহার ছাড়াও বিদেশী পর্যটকরাও বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হবেন।
তিনি জানান, স্কয়ার এয়ার লিমিটেডের নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আছেন যারা প্রায়ই হেলিকপ্টার ভাড়া নিচ্ছেন।
স্কয়ার এয়ার লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করে বর্তমানে পাঁচজন যাত্রী বহনে সক্ষম একটি বেল-৪০৭ হেলিকপ্টার দিয়ে মেডিকেল ও সাধারণ দুই ধরনের যাত্রী পরিবহন করছে স্কয়ার এয়ার। সাধারণ কাজের জন্য হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টার জন্য ১ লাখ টাকা, সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৯০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স। এ ছাড়া ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ প্রতি ঘণ্টার জন্য ৬ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স। জানা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি সাধারণ ট্রিপ এবং চারটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ট্রিপ থাকে স্কয়ার এয়ারের।
১৯৯৯ সালে আমেরিকার তৈরি একটি রবিনসন আর-৪৪ মডেলের হেলিকপ্টার নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রা করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স। বর্তমানে আমেরিকার তৈরি একটি রবিনসন আর-৪৪ এবং একটি র্যাভেন-২ হেলিকপ্টার দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স। এই হেলিকপ্টারগুলো একনাগাড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার বেগে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। হেলিকপ্টারগুলো তিনজন যাত্রীসহ সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৩৪ কেজি ওজন বহনে সক্ষম। উল্লেখ্য, দ্য এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) সদস্য সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স।
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ কাজের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া প্রতি ঘণ্টার জন্য ৪৮ হাজার টাকা। কিন্তু সিনেমার শুটিং, লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজের জন্য ৩০ শতাংশ হারে বেশি ভাড়া দিতে হয়। এ ছাড়া ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ প্রথম ঘণ্টার জন্য ৩ হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫ হাজার টাকা। তবে বিমানবন্দর ছাড়া অন্য কোনো স্থানে হেলিকপ্টার অবতরণ করতে হলে হেলিকপ্টারের সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যিনি ভাড়া নেবেন তার। এ ছাড়া পুরো খরচের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স থেকে ন্যূনতম ৩০ মিনিটের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়া হয়। জ্বালানি খরচ, ইন্স্যুরেন্সসহ বাকি সবকিছু সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স বহন করে।
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর শমশের আলী (অবসরপ্রাপ্ত) জানান, মূলত সামর্থ্যবান করপোরেট লোকজনই তাদের নিয়মিত গ্রাহক। এ ছাড়া সিনেমার শুটিংসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়া হচ্ছে। তবে এ খাতের কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।
তিনি জানান, ফ্লাইটের জন্য অনুমতি নিতে দীর্ঘ সময় ছাড়াও অনেক সময় জ্বালানি সংকটের কারণে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হয় না। সরকার এ ব্যাপারে নজর দিলে হেলিকপ্টার সার্ভিস খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মাহমুদ হুসেইন বলেন, ‘এখন কি হেলিকপ্টার চলছে না? কীভাবে চলছে, আমাদের অনুমতি নিয়েই চালাচ্ছে।’
কিন্তু নীতিমালার অভাবে এ সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এ কথা বলেছে, তারা সঠিক তথ্য দেয়নি। আপনারা ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন, তিনি আপনাদের বিস্তারিত জানাবেন।’
এ বিষয়ে ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড অপারেশন্স পরিচালক উইং কমান্ডার একেএম মাহমুদুল হাসান বলেন, হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী দুটি কোম্পানি তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে। যদি কখনো নতুন নীতিমালা দরকার হয়, সেটা দেখা যাবে। এমনকি কেউ যদি এ খাতে ব্যবসা শুরু করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে সে সব নির্দিষ্ট করা আছে। সুতরাং কোনো সমস্যা তো দেখি না।
তিনি বলেন, ‘নীতিমালার মধ্যেই বলা আছে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের ৪৮ ঘণ্টা আগে সিভিল এভিয়েশনকে জানাতে হবে। আর জরুরি হলে ৫, ১০ ও ১৫ মিনিট এমনকি ১ ঘণ্টার মধ্যেও অনুমতি দেয়া হয়। এখানে সমস্যা কোথায়?’
সূত্রঃ http://bonikbarta.com/2011-08-25/news/details/4724.html

Visit us on FaceBook

একুশ নিউজ মিডিয়া এখন ফেস বুক এ Video News: www.EkushTube.com

তথ্য কণিকা Jahan Hassan জাহান হাসান
Ekush, Publisher/Editor/ Hollywood media hyphenate/ একুশ নিউজ মিডিয়া, লিটল বাংলাদেশ, লস এঞ্জেলেস / 1 818 266 7539 / FB: JahanHassan

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান