ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন?
নভেম্বর 21, 2010 এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান
ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন?
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী
আমেরিকার মধ্যমেয়াদি নির্বাচনের দিন ক্যালিফোর্নিয়ার সেন ডিয়েগো শহরে পেঁৗছালাম। আমাদের দেশের মতো এ দেশে নির্বাচনের দিন ছুটি থাকে না, যে যাঁর মতো কাজ করে যান_শুধু কাজের ফাঁকে একবার ভোট দিয়ে আসেন। যাঁরা বেশি ব্যস্ত বা যেতে অপারগ, তাঁরা ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠান।
সন্ধ্যা থেকে নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করল। টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখানো হলো প্রায় সারা রাত। ভোটাররা প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছেন। ওবামাকে সরাসরি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ভোটাররা তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা ও বিশেষ করে তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারনীতিতে সন্তুষ্ট নন। এই চরম মন্দার কালে ভোটাররা তাঁদের চাকরি ও বাড়ি হারাচ্ছেন রেকর্ড-গতিতে। সেখানে ওবামার বিভিন্ন পরিকল্পনা তাঁদের কোনো সহায়তা দিতে পারেনি। তাঁরা নিম্নকক্ষ বা হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের গরিষ্ঠতা রিপাবলিকান পার্টিকে আবারও ফিরিয়ে দিয়েছেন। সিনেটে অতি অল্প সিটের ব্যবধানে ডেমোক্রেটিক দলের হাতে কর্তৃত্ব রেখেছেন। বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টি থেকে।
ডেমোক্র্যাটদের কেন এই ভরাডুবি? কেন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভোটাররা বেশ ক্ষিপ্ত, তাঁদের চাকরি নেই, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তার ওপর ওবামা সরকার যেভাবে বড় ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও গাড়ি কম্পানিকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন_তাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতে পারেনি। আমেরিকানরা প্রাইভেট সেক্টরে বিশ্বাসী ও তারা ‘বড় সরকার’ বা সরকারি হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। কারণ, বড় সরকার মানে বেশি ট্যাঙ্। রিপাবলিকান ও বিশেষ করে তাদের কট্টরপন্থী ‘টি-পার্টি’ আন্দোলন জনগণের এই উষ্মা পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম হলো। অপরদিকে ডেমোক্র্যাটরা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নীতিগুলোকে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারল না। ফলে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তা-ই হলো। আমেরিকান ভোটাররা উদারপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করে রক্ষণশীলদের আবার কর্তৃত্ব দিলেন। ২০০৬ ও ২০০৮ সালের তুলনায় আমেরিকা আরো ডানে সরে গেল।
অতি কট্টর রক্ষণশীলপন্থী ‘টি-পার্টি’ আন্দোলনকে সারা পলিন বেশ জাগিয়ে তুললেন। তাঁরা রিপাবলিকান দলের মধ্যপন্থীদের কোণঠাসা করে দিলেন। শতকরা ৪০ ভাগ ভোটার তাঁদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এই মধ্যমেয়াদি নির্বাচনের ফলাফলকে সঠিকভাবে বুঝে শিক্ষা নিতে হবে সব পক্ষকে_ওবামা এবং ডেমোক্রেটদেরও; একই সঙ্গে রিপাবলিকান ও ‘টি-পার্টি’ আন্দোলনের নেতাদের। যাঁরা সঠিক শিক্ষা নেবেন, তাঁদের ভবিষ্যতে লাভ হবে সবচেয়ে বেশি।
নির্বাচনের পরদিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এক খোলাখুলি প্রেস কনফারেন্সে স্বীকার করে নিলেন, তাঁর দলের বিরাট পরাজয় হয়েছে, কারণ তাঁরা তাঁদের ভোটারদের অনুভূতি ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। ভোটারদের সঙ্গে তাঁদের যে দৃঢ়সংযোগ ছিল, তা দুই বছরের মাথায় হারিয়ে ফেলেছেন। ওবামা আরো স্বীকার করলেন যে তার অর্থনৈতিক সংস্কার নীতিগুলো মন্দা কাটাতে পারেনি। পারেনি তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।
ওবামা দুঃখিত হলেও হতাশ নন। তিনি ঘোষণা দিলেন, তিনি রিপাবলিকান দলের সিনেট নেতা ম্যাককেইন ও হাউস নেতা বোহনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং সব দলের সঙ্গে মিলেমিশে ভবিষ্যতে কাজ করার দৃঢ়-আগ্রহ দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে স্বীকার করলেন যে কাজটা সহজ হবে না এবং সব ক্ষেত্রে হয়তো ঐকমত্য সৃষ্টি করা যাবে না। আপাতত জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বাবলম্বিতা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার বিষয়টিই বেছে নিয়েছেন। রিপাবলিকান নেতাদের সরকারের বিপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কথা বলতে গিয়ে তিনি স্বীকার করেন, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগটিকে তাঁর ভোটাররা ঠিকমতো অনুধাবন করেনি।
তাঁর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসানীতির পুরনো বিতর্কে ফিরে যেতে চান না, তবে এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তনে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত_জানালেন ওবামা। ওবামা আরো স্মরণ করিয়ে দিলেন, প্রেসিডেন্ট রিগ্যান এবং ক্লিনটনও এ ধরনের মধ্যমেয়াদি নির্বাচনে হেরেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার তাঁদের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ফিরে পান। কথা হচ্ছে, ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত মেনে নেবেন? ক্লিনটন ১৯৯৪ সালের মধ্যমেয়াদি নির্বাচনের পর তার উদারপন্থী নীতি থেকে সরে গিয়ে মধ্যপন্থা বেছে নিয়েছিলেন। ফলে কখনো তিনি রিপাবলিকানদের সঙ্গে আপস করেন, কখনো বা তাঁদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত খেলা ‘ট্রায়েঙ্গুলেশন’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খেলেছেন ও তাঁর পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করেছিলেন।
১৬ বছর পর ওবামা কি সেই পথ ধরবেন? এ মুহূর্তে ওবামা তা জনসম্মুখে তুলে ধরতে চান না। এখনো তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে ছোট করে আনতে চান না। মধ্যপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে চান না। কিন্তু রাজনীতিবিদ ওবামা ভালো করেই জানেন, সবার সঙ্গে সমঝোতা ও আলোচনার ভিত্তিতেই তিনি ভবিষ্যতে তাঁর রাজনৈতিক জীবন পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন। তিনি এটাও বেশ ভালোভাবেই জানেন, আমেরিকার জনগণের মতামত খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। অতীতে এর ভিত্তিতেই তিনি বড় বড় নেতাকে হারিয়ে হোয়াইট হাউসে পেঁৗছেছেন। তিনি জানেন, অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েই তাঁকে এগোতে হবে। যেহেতু তাঁর পুনর্নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি_রাজনীতিবিদ ওবামা নিশ্চয়ই দক্ষতার সঙ্গে এগোবেন। বাকি সব নেতার মতো তিনিও নিশ্চয়ই তাঁর রাজনৈতিক জীবন কাটাতে সব প্রচেষ্টাই নেবেন। অবশ্য কতটুকু সক্ষম হবেন_তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
jahan hassan ekush tube bangla desh জাহান হাসান, লস এঞ্জেলেস. বাংলাদেশ. বাংলা, আমাদের সময়, আলোচনা, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, জনকন্ঠ, ডেসটিনি, দিগন্ত, দিনের শেষে, নয়া দিগন্ত, প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ভোরের কাগজ, মানবজমিন, মুক্তমঞ্চ, যায় যায় দিন, যায়যায়দিন, যুগান্তর, সংগ্রাম, সংবাদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, রাজাকার, আল বদর, একুশ